ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ

East Bengal in talks with Liverpool, Bayern Munich and PSG for ...

আজকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ ৷ আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১ আগস্ট ১৯২০ সালে এই ক্লাবটির জন্ম হয়েছিল কলকাতায় ৷ অন্য সব সংগঠনের মতই উদ্দেশ্য স্থির করে, পরিকল্পনা করে, ফুটবল দল গঠন করেই ক্লাবের পত্তন হয় ৷ ১৯১৮ এবং ১৯১৯ সালে ঢাকার উয়াড়ি ক্লাব কলকাতা লীগ চ্যাম্পিয়ন লিঙ্কনস এবং মোহনবাগানকে কয়েকটি ম্যাচে পরাজিত করেছিল ৷ কলকাতা ময়দানে তখন তাজহাট, স্পোর্টিং ইউনিয়ন প্রভৃতি দলে পূর্ব বাংলার খেলোয়াড় ভর্তি ৷ এমনকি মোহনবাগানেও ছিল অনেক পূর্ব বাংলার খেলোয়াড় ৷ কিন্ত ক্লাবের প্রশাসন মানে মোহনবাগানের প্রশাসন ছিল বোস, মিত্র, সেন দের কব্জাধীন ৷ এঁরা প্রায় সকলেই সাবেকী কলকাতার অভিজাত, শিক্ষিত সমাজের উপরের দিকে ৷ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চৌধুরী এবং প্রথম সভাপতি সারদারঞ্জন রায়রা ছিলেন সেই সময়ের পূর্ব বাংলার অভিজাতদের প্রতিভূ ৷  পরে সুরেশ তালুকদার এঁদের সঙ্গে যুক্ত হন ৷

কুমারটুলী পার্কে ক্যালক্যাটা ইউনিয়ন নামে ছোটদের একটি ফুটবল ক্লাব ছিল ৷ এই ক্লাবে যাঁরা আসতেন, যেমন জোড়াবাগানের জমিদার সুরেশ চৌধুরী, কুমারটুলীর তড়িৎ রায়, ঢাকা উয়াড়ীর নসা সেন ইত্যাদি মিলিত হয়ে ঠিক করলেন, কলকাতা ময়দানে একটা বাঙালদের ফুটবল ক্লাব তৈরী করতে হবে ৷ এরজন্য জার্সী কিনতে গেলেন দুজন হোয়াইটওয়ে লেডলোর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ৷ সেটা কোথায় ছিল জানেন তো ? এখন যেখানে মেট্রো সিনেমা, বা যে বাড়িটায় ছিল আমেরিকান লাইব্রেরী, ওই বাড়িতেই ছিল হোয়াইটওয়ে লেডলোর দোকান ৷ আরও একটা দোকান ছিল কলকাতায়, নাম ওয়াছেল মোল্লা ৷ ওটার অস্তিত্ব এখনও আছে কমলালয় সেন্টারে ৷ যাইহোক, ওই লেডলোর দোকানে ঝোলানো ছিল একটা জার্সি ৷ লাল এবং সোনালী, আড়াআড়ি ভাবে সেলাই করা ৷ এতটাই ঝকঝকে যে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না ৷ ওটাই পছন্দ হয়ে গেল, যে দুজন এসেছিলেন, তাঁদের ৷ এরপর বাড়ি ফিরে সবাই মিলে স্থির করলেন যে জ্বলন্ত মশাল হবে ক্লাবের প্রতীক চিহ্ন ৷ প্রথম বছরে দলগঠন করে কিছুই হল না ৷ কিন্ত ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বলে যে একটা ক্লাব আছে এবং তারা ফুটবলও খেলে, সেটি প্রমান করা এবং নাম ছড়ানোর জন্য তারা শ্যাম স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হারকিউলিস কাপে নাম দিল ৷ এটা তে ছয়জন করে খেলতে পারত ৷ সেই প্রথম ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের লাল সোনালী জামা পরে ক্লাবের ছেলেরা মাঠে নামল ৷ আর একটি বিশেষ খবর হল, যা অনেকেরই জানা নেই, প্রথম দলের অধিনায়ক ছিলেন গোষ্ঠ পাল ৷ গোলে নগেন কালী, হাফ ব্যাকে নসা সেন, আর ফরোয়ার্ডে উল্টে পাল্টে খেলেছিলেন , জ্ঞ্যানা পোদ্দার, ধীরা মিত্র, শৈলেশ বসু এবং প্রশান্ত বর্ধন ৷ পরের বছর পাকা দল তৈরী করে ইস্টবেঙ্গল এগার জনের দলই গঠন করে ৷ তাজহাট নামের একটা দল ছিল ৷ তাতে যারা খেলতেন, বেশি ভাগই পুর্ববাংলার ৷ তারা সবাই চলে এলেন ইস্টবেঙ্গলে ৷ তাজহাট দলটি উঠেই গেল ৷

এরপর প্রথম বিভাগে উঠেই ইস্টবেঙ্গল একটা ভাল মাঠ চাইল I F A র কাছে ৷ ব্রিটিশরা নেটিভদের ক্লাবের জন্য নতুন মাঠ দিতে প্রস্তূত ছিলনা। তখনকার কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছিল কুখ্যাত চালর্স টেগার্ট। চালর্স টেগার্ট মোহনবাগানকে বাধ্য করলো, CFC  মোহনবাগান মাঠের কিছু অংশে ইস্টবেঙ্গলকে ছেড়ে দিতে ৷ পারস্পরিক যে রেষারেষি বা উন্মাদনা, তার সূচনাও সেই মাঠ ভাগ থেকে শুরু। দুই ক্লাবের মধ্যে উন্মাদনা স্বত্বেও ১৯৬২ সাল অবধি মাঠ ভাগের সেই নিয়ম লাগু ছিল ৷

— লিখেছেন শ্রী গৌতমরঞ্জন বসু ৷৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *