Archive For The “ধারাবাহিক” Category
লেখক – ডঃ অমলশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ( তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌত্র) জ্ঞান হয়ে থেকে পরিবারটির ভরকেন্দ্র হিসেবে অনেক দিন পর্যন্ত দাদুকেই দেখে এসেছি।তবে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর সম্পর্কে আলোচনার ক্ষেত্র এটা নয়। ১৯৭১ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বরে দাদুর মৃত্যুর সময় আমার বয়স হয়েছিল আঠার বছর। ঐ রকম একটা মানুষকে মোটামুটি জানা বোঝার পক্ষে সময়টা একেবারে অকিঞ্চিৎকর নয়। তবে…
১৯৭১ সালের মহালয়ার দিন দশেক আগে দাদুর মৃত্যু হয়। শ্রাদ্ধশান্তি চুকতে চুকতে শুরু হয়ে যায় পূজো। স্বাভাবিক কারণেই সে বারের পূজো ছিল স্তিমিত, আজকের ভাষায় লো কি’তেবাঁধা।মহালয়ারসেই ভোরে মুজ্ঝ্যমান সুপ্তিমগ্ন পরিবারে একমাত্র আমিই ছাদের ঘরটিতে জেগেছিলাম আকাশবাণীর বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান শুনতে। পরবর্তী কালে শোনা আর তারও পরে বোঝা প্রাইভেট/ পারসোনাল স্পেস্ বিষয়টি আমার…
প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পরেও ইস্কুল আবার আজ খুলবে,কাল খুলবে এই রকম শোনা যেতে লাগল। বিজ্ঞান শাখার সহপাঠী বন্ধুদের মুখে পরে শুনেছি যে এই সময়টা তারা নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করে লেখাপড়ার অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছিল। ওদের সামনে ছিল সুস্পষ্ট লক্ষ্য, যাকে এক,দুই,তিন করে ধরে দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্য অনুসরণ করে তারা অনেক যত্নে নিজেদের তৈরি…
আমি তখন ক্লাস নাইন, কলা শাখার ছাত্র। মানবিক শাখায় হাতেখড়ির শুরু সবে মাত্র। ন-লেজ সে জাতীয় গজায় নি বটে তবে এক জাতীয় ক্যারেজ গজিয়েছিল, কিছুটা। সেটা অনেকটা অজ্ঞানতার আনন্দে ভেসে চলা, অবিমৃষ্যকারীদের যেমনটা হয়ে থাকে।-আদপে, যা ‘ফুলস্ রাস—হোয়ার এ্যঞ্জেলস্ ডেয়ার’ গোছের ব্যাপার। হিন্দু স্কুলের নাইন-এ তে ছাত্র ছিল মাত্র ন-জন। শিক্ষকের টেবিলের চারপাশে ঘিরে প্রাইভেট…
১৯৬৭ সালের গরমের ছুটিতে সদলবলে শিলিগুড়ি যাওয়া ঘটেছিল। বেডিং এর সঙ্গে বাঁধা হয়ে বইপত্তরও গিয়েছিল ট্রেনে চড়ে, তবে পড়াশুনো হয়েছিল অল্পই। মামারবাড়ির বিশাল বাগানে নানা ধরনের স্ব-উদ্ভাবিত খেলা আর ভালোমন্দ ভোজনের মধ্যে দিয়ে দিনগুলো যেন উড়ে চলেছিল। এরই মধ্যে বড়োদের কিঞ্চিৎ উতপ্ত আলাপচারিতায় জানতে পারলাম কোথায় যেন হাটে কি সব গন্ডগোল হয়েছে, ‘সোনাম ওয়াং…
১৯৬৩ সালের জানুয়ারী মাসে আমি আর ছোট ভাই বাচ্চু ভর্তি হলাম হিন্দু স্কুলে ক্লাস থ্রি’তে। আগের বছর ক্রাইস্টচার্চে ক্লাস থ্রি তেই পড়েছি—ফলে একটা শিক্ষাবর্ষ পেছিয়ে গেলাম। মহা মহীমান্বিত শিক্ষা্নিকেতনটিতে ভর্তি হয়ে কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে খুব একটা পর্বান্তর হয়নি তখনো। যাতায়াতটা কেবল শহরের বাইরের দিক ছেড়ে ঘটতে থাকল শহরের ভেতর দিকে। সকালবেলা…
পরবর্তী কালের দ্রুত ধাবমান জীবনের তুলনায় শৈশব ও বাল্যকালের অপেক্ষাকৃত নিস্তরঙ্গ সময়টা মনে হয় কেমন যেন বড়ই প্রলম্বিত। কেমন যেন ঢিমেতালা গতিতে চলেছিল তো চলেছিলোই। আরোও একটু বড় হয়েই ইস্কুলে ঢোকা ইস্তক্ জীবনের গতি কিছুটা বেড়েছিল ঠিকই; কিন্তু সেখানে শিক্ষানবিশী করতে করতে উঁচু ক্লাসে যে কোন দিন পৌছনো যাবে তা মনেই হচ্ছিল না। তবু এরই…
যে ক’টা সাদাকালো ফটোগ্রাফ এখনও টিকে আছে তাতে দেখি প্রচুর গাছপালায় ছাওয়া কয়েকটা পুকুর আর মাঠ নিয়ে টালা অঞ্চলটা। ইটের পাঁজর ও লোহার খাঁচা বিশিষ্ট কোলকাতার উপান্তে সত্যিই আশ্চর্য রকমের জনবিরল,পরিচ্ছন্ন,আর নিরাপদ ছিল ১৯৫০ সাল নাগাদ। কতটা যে জনবিরল তা দুটো দৃষ্টান্ত দিলে বোঝা যেতে পারে। শিশু অবস্থায মা নাকি শীতকালে আমাকে তেল…
আমার জন্মের বছর খানেক আগে শিলিগুড়ির দাদু অর্থাৎ দাদামশাই,অবনীনাথ ভট্টাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসার জন্যে কোলকাতায় আনা হয। সেই উপলক্ষে মামার বাড়ীর গোটা পরিবারটা ভাড়া নিয়ে উঠে আসে ইন্দ্র বিশ্বাস রোডে ভক্তিদিদের বাড়ীর এক তলায়। ভক্তিদি ছিলেন বসুমতি পত্রিকার সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে আর ঐ পত্রিকাটির অন্যতম পরিচালক নির্বাণীতোষ ঘটকের স্ত্রী। অসুস্থ্ রুগীর চিকিৎসার…
অনেক পরে বুঝেছি যে আমাদের জন্মের সময়ে গোটা দেশের সার্বিক অবস্থাটাই ছিল বেশ টালমাটাল। মাত্র বছর ছয়েক আগে ইংরেজ বিদেয় নিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা যে খায় না মাথায় মাখে সে ধারণা তখনো স্পষ্ট হয়নি। গোটা দেশের পদচারণা অনিশ্চিত, অস্থিতিস্থাপক। কারণ সম্ভবত নতুন রাষ্ট্রনায়করা তখনো পর্যন্ত আপন প্রত্যয়ে অধিষ্ঠিত হয়ে উঠতে পারেননি।বাড়িতে তো বটেই বাইরের জগত তখন…