ফিউশন বিজয়া


bijoya

পুজো শেষ হয়ে এলো। পুজো জুড়ে সাজপোশাকের জাকজমক তো ছিলই। তবুও  আনন্দউৎসবে ভাল ভাল খাওয়া না থাকলে চলে নাকি? পুজোশেষের আনন্দরেশ ধরা থাকে বিজয়ার মিষ্টমুখে।  কোভিডের চক্করে বিজয়া এবার যত না সাক্ষাতে তার চেয়ে অনেক বেশি ফেসবুকে আর হোয়াটসঅ্যাপে, প্লেটে সাজাবার বদলে মিষ্টি সাজাবার নতুন পালা এখন সেখানেই। দিন বদলেছে। তাই চিরকালীন মিষ্টিরাও চাইছে নতুন সাজ। শুধু কি ভবানীপুর আর বহরমপুরের মন ভোলালেই চলবে? চাই নিউজার্সি আর কিয়োতোর হৃদয়ও। ‘বিশ্বসাথে বিহার’ করার জন্য তাই এবার হাজির বিশ্বস্বাদের ফিউশন মিষ্টি।।

লিখেছেন – স্বাতী লাহিড়ী

ভ্যানিলা চেরির ছানার পায়ের

উপকরণঃ ছানা ২৫০গ্রাম, চিনি স্বাদ অনুযায়ী, দুধ [ফুল ক্রিম দুধ হলে স্বাদ বেশি ভালো হয়]- ২লিটার, ছানা ভাজবার জন্য ঘি-প্রয়জনমত, কাজুবাদাম ও কিশমিস প্রয়োজনমত, ভ্যানিলা এসেন্স।

বানানোর পদ্ধতিঃ কড়াইতে ঘি গরম করে ছানা অল্প ভেজে নিতে হবে। ছানার রং সাদা থাকলেই ভালো হয়। দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হবে। জ্বাল দেবার সময় ক্রমাগত নাড়তে হবে, না হলে দুধে সর পড়ে যাবে। দুধ অল্প ঘন হলে চিনি দিতে হবে। চিনি গলে গেলে ছানা, কিশমিস ও কাজুবাদাম দুধে দিয়ে পাক দিতে হবে। দুধে-ছানায় মিশে গিয়ে যখন ঘন হয়ে যাবে তখন নামিয়ে পরিবেশনের জন্য রাখা বাটিতে গরম গরম ঢেলে রাখবেন। ছানার পায়েসে ভ্যানিলা এসেন্স দেওয়া হয় না কিন্তু দিলে দেখবেন স্বাদ কেমন বদলে যায় তেমনই ওপরে যদি সাজিয়ে দেন লাল লাল চেরি দিয়ে তবে তো ফাটাফাটি। ভ্যানিলা এসেন্সের বদলে মধু আর চেরির সাজবদলে কিন্তু স্বাদবদলও হবে।।

কাজুবাদাম মুগডালের পায়েস

kaju

 উপকরণঃ সোনা মুগের ডাল- ৫০ গ্রামের একটু বেশি, দুধ ২ লিটার। চিনি স্বাদ অনুযায়ী, ডাল ভাজবার জন্য ঘি, এলাচ গুঁড়ো সামান্য। বানানোর পদ্ধতি- মুগ ডাল ঘি তে ভেজে নিতে হবে। লালচে আভা ধরবে ডালে, তারপর মিক্সিতে অথবা শুকনো শিলে ভেঙে আধভাঙ্গা করে নিতে হবে। দুধে চিনি দিয়ে জাল দিয়ে সামান্য ঘন করে ডাল ভাঙা মিশিয়ে খুব ভালভাবে নাড়তে হবে। নাহলে তলায় ধরে যাবে। বেশ ঘন হয়ে এলে এলাচ গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে নামাতে হবে। মুগডালের পায়েশের উপরে পেস্তা, আখরোট কাজু বাদাম আর কিসমিসের সাজসজ্জার যেন কোনো ফাঁক না থাকে।

স্ট্রবেরি মিল্ক কেক

straw

উপকরণঃ দুধ ২ লিটার, স্বাদ অনুযায়ী চিনি, পাতিলেবুর রস বা ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট, বড়ো এলাচ ছাড়িয়ে দানা আলাদা রাখতে হবে। তরল স্ট্রবেরি অথবা চকোলেট।

বানানোর পদ্ধতি- কড়াইতে দুধ দিয়ে সমানে জ্বাল দিতে হবে, না হলে সর পড়ে যাবে। দুধ বেশ ঘন হয়ে এলে পাতিলেবুর রস বা ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট দিয়ে আবারও নেড়ে যেতে হবে। কোনোভাবেই যেন বড় বড় দলা পাকিয়ে না যায় সে দিকে নজর রাখতে হবে। ডেলা বেশ ছোট ছোট হলে চিনি কাজু আর কিশমিস দিয়ে আবার নাড়তে হবে। এই সময় গ্যাস কমিয়ে নাড়তে হবে। লালচে রং ধরলে উল্টে দিতে হবে। বড় থালায় ঘি মাখিয়ে কড়াই থেকে ঘন থকথকে মিল্ক কেক তাতে ঢেলে হাতার পেছন দিয়ে সমান করে দিতে হবে। এই সময় ছুরি দিয়ে কেটে নেওয়া যায়। আবার ঠান্ডা হলে থালা উল্টে দিয়ে কেটে পছন্দ মত সাইস করা যায়।

ঠান্ডা মিল্ক কেক পরিবেশনের সময় ওপরে তরল স্ট্রবেরি অথবা চকোলেট যা দোকানে অনায়াসে পাওয়া যায় তা দিয়ে সাজিয়ে দিন। চৌকো চৌকো মিল্ক কেক পরিবেশনের সময় স্ট্রবেরি টুথটিকে গেঁথে মধ্যেখানে অথবা এক কোনায় সাজিয়ে দিতে পারেন।

রসগোল্লার চকলেট পায়েস

উপকরণ- রসগোল্লা ১০টি, দুধ ২লিটার, চিনি স্বাদমতো, তরল চকলেট- সাজাবার জন্য।

বানানোর পদ্ধতি- রসগোল্লাগুলো থেকে রস চেপে নিতে হবে। এরপর দুধে চিনি দিয়ে জ্বাল দিয়ে পছন্দ মত ঘন করুন। ক্রমাগত নাড়তে হবে। দুধ ঘন হয়ে এলে রসগোল্লাগুলো দিয়ে মিনিট পাঁচেক নাড়ুন, ঠান্ডা করে পরিবেশনের সময় রসগোল্লার উপরে ছরিয়ে দিন তরল চকলেট। তৈরি চকোগোল্লার পায়েস।

কিশমিস রাজভোগ

উপকরণ- বড় রসগোল্লা ১০টি, দুধ ঘন করে তৈরি ক্ষির, কাজুবাদাম আর পেস্তা কুচি কুচি করে কাটা, কিশমিস, দুধ ২ লিটার চিনি স্বাদ মতো।

বানানোর পদ্ধতি- প্রথমে বড়ো রসগোল্লাগুলোর রস চিপে মাথার দিক থেকে কেটে নিয়ে ভেতর থেকে যা আছে বার করে নিতে হবে। এবার ঘন ক্ষিরে কাজু বাদাম আর পেস্তা কুচি মিশিয়ে চামচ করে ক্ষির রসগোল্লার পেটে ঢোকাতে হবে। কেটে রাখা রসগোল্লার অংশটা এরপর ওপরে দিয়ে টুথপিকে কিশমিস দিয়ে আটকে দিন। দুধে চিনি দিয়ে জাল দিয়ে ঘন করে নামানোর অল্প আগে আসতে আসতে টুথপিক লাগানো রাজভোগগুলো ঘন দুধে দিয়ে দিন। ছড়ানো কড়াইতে করলে নামাবার সময় কিংবা পরিবেশনের সময় তুলতে সুবিধে হবে।

চকোলেট এলোমেলো

উপকরণঃ ময়দা ৫০০ গ্রাম, ময়ানের জন্য গাওয়া ঘি ১০০গ্রাম, ভাজবার জন্য ঘি, চিনি ৫০০ গ্রাম, জল।

বানানোর পদ্ধতি- ময়দায় ঘি দিয়ে ময়ান দিয়ে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে শক্ত করে মাখতে হবে। ভাল করে ধৈর্য ধরে ঠাসতে হবে। এবার লুচির আকারে বেলে নিয়ে মধ্যেখানে ছুরি দিয়ে লম্বা করে চার/পাঁচটা দাগ কাটতে হবে। দুধারে না কাটা অংশ ধরে লম্বালম্বি জড়িয়ে নিয়ে গরম ঘি তে ভাজতে হবে। চিনি আর সামান্য জল দিয়ে তৈরি ঘন রসে ভাজা এলোমেলো গুলো দিয়ে অল্পক্ষণ রেখে তুলে থালায় সাজাতে হবে। ঠান্ডা হলে চিনির রস জমাট বেঁধে গেলে তুলে কৌটায় রাখতে হবে। চিরচেনা এলোমেলো যদি একটু স্বাদে খেতে চান তবে এর ওপর স্ট্রবেরি ফ্লেভার জড়িয়ে নিতে পারেন কিংবা তরল চকলেট।

ননস্টিক পাটিসাপটা

pati

পাটিসাপটা একরকমের পিঠে। কে না জানে, পিঠেতে নতুন গুড়, নারকেল থাকতেই হবে। কিন্তু সহজ পাটিসাপটা বছরের যে কোন সময়ে করা যায়। শীতের নলেন গুড় নয় শপিংমলের চিকিতেই তৈরি হতে পারে বিজয়ার পাটিসাপটা।

উপকরণঃ সুজি ১কাপ, ময়দা আধ কাঁপ, চালের গুড়ো আধ কাপ, দুধ ১লিটার, চিনি সাধ মতো, ঘি ও নারকেল কোড়া সামান্য।

বানানোর পদ্ধতিঃ দুধ চিনি সহযোগে জ্বাল দিয়ে মোটামুটি ঘন ক্ষির করে পাতলা করে কাটা কাজু মিশিয়ে ঠান্ডা করে রাখবেন। সুজি, ময়দা ও চালের গুঁড়ো একসঙ্গে জল দিয়ে অল্প পাতলা করে মেখে রাখতে হবে। এই গোলায় অল্প চিনি দিতে পারেন। এরপর ননস্টিক প্যানে সামান্য তেল মাখিয়ে গোল হাতায় গোলা নিয়ে ছড়িয়ে দিন। ভাজা হলে মধ্যে ঠাণ্ডা ক্ষীর তার ভেতর দিয়ে রোল করে নামান। খেতে দেওয়ার সময় উপরে নারকেল কোড়া দিয়ে সাজাতে পারেন অথবা হালকা ঘি তে নারকেল কোড়া ভেজে নিয়ে সহস পাটিসাপটায় ছড়িয়ে পরিবেশন করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *