মোহনবাগান এবং ভারতীয় ফুটবলের শুরুর কথা

Mohun Bagan gets featured on NASDAQ billboards – Democratic Accent
Mohun Bagan Featured on Nasdaq

ভারত বর্ষে প্রথম ফুটবল খেলা  কবে শুরু হয় ? ১৮৭৮ সালে দশ বছর বয়সী একটি ছেলে তার মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে গঙ্গাস্নানে ৷ ইডেন গার্ডেনের দক্ষিণের রাস্তার নাম কিংসওয়ে ৷ বর্তমানে যেটা মোহনবাগান মাঠ, আগে সেটাই ছিল ক্যালক্যাটা ফুটবল ক্লাবের মাঠ ৷ ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত CFC তখন রাগবি খেলত ৷ ১৮৭৯ এ ওই ক্লাব উঠে যায় ৷ ১৮৮৪ সালে আবার প্রতিষ্ঠিত হয় ৷এই সময়েও ওরা রাগবি খেলত ৷ ১৮৭৮ সালে ওই দশ বছর বয়সী ছেলেটি যে খেলা দেখে, সেটা রাগবি ৷ ওই ছেলেটির বাবা ছিলেন কলকাতার লব্ধ প্রতিষ্ঠিত এক চিকিৎসক ৷ নাম ডাক্তার সূর্য্য কুমার সর্বাধিকারী ৷ আর ছেলেটির নাম ছিল নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী ৷  ছেলেটি পড়তো হেয়ার স্কুলে ৷ তখন অবশ্য অন্য নাম ছিল বিদ্যালয়ের ৷ নগেন্দ্র পরের দিন স্কুলে গিয়ে খেলাটির বর্ণনা দিতেই  বেশ কয়েকজন বন্ধু তাতে আগ্রহ দেখাল ৷ তারা সবাই মিলে পরের দিন বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে ফুটবল কেনার জন্য চাঁদা দিল ৷ মোট উঠল তিরিশ টাকা ৷ ঐ টাকা নিয়ে যাওয়া হল চৌরঙ্গির ইউরোপিয়ানদের খেলার সরঞ্জামের দোকানে ৷ কিন্ত দাম চাইছে ত্রিশ টাকার বেশী ৷ ছেলেরা হতাশ মুখে ফিরে যাচ্ছিল ৷ কিন্ত ইউরোপিয়ান বিক্রেতা মনে খুব আঘাত লেগেছিল ৷ উনি ত্রিশ টাকাতেই একটা রাগবি বল ছেলেদের দিয়ে দেন ৷ পরের দিন টিফিনের সময়ে রাগবি বল দিয়ে ফুটবল খেলা শুরু হয় ৷ কেউ কোনও নিয়ম কানুন জানেনা ৷ নগেন্দ্র প্রসাদ যে টুকু জেনে এসেছেন, সেইটুকুই সম্বল ৷ এবার হেয়ার স্কুলের পাশেই তো প্রেসিডেন্সি কলেজ ৷ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ৷ ওখানে অধ্যাপনা করতেন প্রফেসর বি.ভি.স্ট্যাক ৷ তিনি আবার প্রেসিডেন্সীর ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ৷ তিনি দেখলেন, রোগা রোগা বাচ্ছা ছেলেগুলো অতীব উৎসাহ নিয়ে রাগবি বলকেই ফুটবল ভেবে লাথি মারছে ৷ উনি ছেলেদের ডেকে, ফুটবল খেলার নিয়মকানুন বুঝিয়ে দিলেন ৷ উপহার দিলেন একটা সত্যিকারের ফুটবল ৷ আর একটা বই ৷ যাতে নিয়ম কানুন গুলো লেখা ৷ দিন কয়েক বাদেই দেখা গেল, দু দল ছাত্র দলবেঁধে হেয়ার স্কুলের মাঠে নিজেদের মধ্যে খেলছে ৷ স্বয়ং স্ট্যাক সাহেব হাফ প্যান্ট পরে খেলাচ্ছেন রেফারি হিসাবে ৷ ওই খেলা দেখতে কলেজ স্ট্রীট জ্যাম ৷ প্রচুর পথচলতি মানুষ খেলা দেখছেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ৷ সেই শুরু ৷ এরপরে হেয়ার স্কুলেই তৈরী হয় হেয়ার স্কুল ফুটবল ক্লাব ৷ এরপরে, নগেন্দ্র প্রসাদ পরীক্ষার পরে বৃহত্তর শিক্ষার জন্য স্কুল ছাড়লেন ৷ কিন্ত বাঙালি তাঁকে আর ছাড়ল না ৷ হেয়ার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের অনুপ্রেরণায় ১৮৮৪ এবং ১৮৮৫ সালে তৈরী হল ওয়েলিংটন ক্লাব, টাউন ক্লাব, কুমারটুলী ইন্সষ্টিটিউট, শোভাবাজার  স্পোর্টিং, হেয়ার স্পোর্টিং ক্লাব নামের নানা ধরনের ক্লাব ৷ দক্ষিণ কলকাতায় তৈরী হল, ন্যাশানাল  এসোশিয়েসন ৷ এই সময়েই দুখীরাম মজুমদার শুরূ করেন ১৮৮৯ সালের প্রথম দিকে এরিয়ান্স ক্লাব ৷ আর এরপরে আগস্ট মাসে ১৮৮৯ সালে মোহনবাগান ভিলার সামনের বাড়িতে মোহনবাগান ক্লাব ৷ 

সবচেয়ে আগে যেটা বলবার, তা হল, আমার কাছে ১/ শিবরাম কুমার সম্পাদিত মোহনবাগান অমনিবাস, ২/ রাখাল ভট্টাচার্য্যের লেখা কলকাতার ফুটবলা ৩/ দুটো একটি স্মরণসংখ্যা আছে ৷ এর ভিত্তিতেই আমি এই লেখাগুলি লিখছি ৷  আগেই বলেছি, আমি চিত্রপরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর পরিচালনার দলে একজন গবেষক ছিলাম ৷ আর ১৪০০ বাংলা সাল বা ইংরাজী ১৯৯২/৯৩  সালে আমি সারা পশ্চিমবঙ্গের সাতটা জেলা জুড়ে, অনেক মোহনবাগানে খেলে গেছেন, এমন খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নিয়েছি ৷ আমার ধারণা, ধীরেন দের সর্বশেষ সাক্ষাৎকারও আমারই নেওয়া ৷ কারণ তার কিছুদিন পরেই উনি মারা যান ৷ যাইহোক, এখন প্রশ্ন হল, মোহনবাগান ভিলার মাঠের নামেই  কি মোহনবাগান ক্লাবের নাম ? কুমারটুলী অঞ্চলে একটি বিগ্রহ আছেন, মদনমোহন ৷ আমি যখন ঐ চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত ছিলাম, তখন কোনও বইতে পড়েছিলাম, যে বইটির নাম বা তার লেখকের নামও মনে নেই, সম্ভবত পরেশ ধর বা ঐ জাতীয় , তাতে তিনি লিখেছিলেন যে ঐ মদনমোহনের নামে অনেকটা জমি দেওয়া ছিল পূজার খরচ চালাবার জন্য ৷ ঐ জায়গার নাম ছিল মদনমোহনের বাগান ৷ পরবর্তী কালে অতবড় মদন মোহনের বাগান লোকমুখে ছোট হয়ে গিয়ে দাঁড়ায় মোহনের বাগান বা মোহনবাগান ৷ এখন কীর্তি মিত্র ঐ বাগানে জমি কিনে তাঁর ঐ মর্মরপ্রাসাদের নাম রাখেন মোহনবাগান ভিলা নাকি আগে থেকেই ওই জমিতে ঢোকার রাস্তার নাম ছিল মোহনবাগান লেন ? এটার কোনটা ঠিক ? মোহনবাগান লেন কি মোহনবাগান ভিলার আগে থেকেই ছিল ? নাকি ভিলা তৈরী হওয়ার পরে রাস্তার নাম হয় মোহনবাগান লেন ? এটা দ্বিধাশূন্যভাবে এবং অকাট্য প্রমাণ হিসাবে বলা যেতে পারে কলকাতা পৌরসভার বিল্ডিং বিভাগের নথি ঘাঁটলে ৷ কারণ পুরোনো দলিলে থাকবে কোনও জমির চারপাশের পথের নাম ও ঠিকানা ৷ যাইহোক, ১৮৮৯ সালের আগস্ট মাসের প্রথম দিকেই উত্তর কলকাতার সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলির কিশোর ও যুবকেরা নিজেদের মধ্যে সভাসমিতি করছিলেন ৷ ১৫ই আগস্ট, ১৮৮৯ সালে ১৪ নং বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের বাড়িতে একটা সভা ডাকা হয় ৷ ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন ভূপেন্দ্র নাথ বসু, যাঁর নামে ভূপেন বসু এভিনিউ ৷ আর পুরো সভা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ওঁর ভায়ের ছেলে এটর্নী যতীন্দ্র নাথ বসু ৷ সেদিনের ঐ সভায় ভূপেন বসু কে মোহনবাগান ক্লাবের সভাপতি করে সম্পাদকের ভার দেওয়া হয় যতীন্দ্র বসুকে ৷ তখন নাম দেওয়া হয়, মোহনবাগান স্পোর্টিং ক্লাব ৷ 

A Lady Mariner

এরপরে জানাব, কিভাবে নাম পরিবর্তন হয় এবং ক্লাবের জার্সীর রং এবং লোগো ঠিক করা হয়েছিল ৷

— লিখেছেন, গৌতমরঞ্জন বসু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *