একটা প্রচলিত গল্পের কথা দিয়ে শুরু করা যাক। বাংলার কোন এক অঞ্চলে কথকতার আসর বসে। কথকঠাকুর মহাপন্ডিত লোক। শাস্ত্র,পুরাণ সবই তার কণ্ঠস্হ। আর পরিবেশনায় থাকে ছত্রে ছত্রে নাটকীয়তা। ভক্ত সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। তবে দোষ একটা আছে। কাম-কামিনীর।তা বড় মানুষের অমন থাকে,গায়ে না মাখলেই হয়। সঙ্গিনীটি ব্রাহ্মণের বিধবা।ঘরের অন্যসব কাজের সাথে কামটুকু সেইই মেটায়।কথকতার আসরে হাজিরাও দেয়। সেদিন আসরে ঠাকুরের একটা বক্তব্য শোনার পর থেকে কেমন যেন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।রাত্রে ঠাকুর বিছানায় উঠে সাধন সঙ্গীনীকে কাছে টেনে নিতে গিয়ে থামলেন। যে লোক অন্য নারীতে উপগত হয় তাকে নরকে ধারালো কাঁটাগাছ জড়িয়ে ধরতে হয়,রক্তাক্ত অবস্হায় মূত্যু হয়। ঠাকুরের এমন পরিণাম ভেবেই যত আতঙ্ক। ‘দুর,পাগলী.এমন লোকের সংখ্যা এতো বেশি,এতদিনে কাঁটাগাছের ধার ভোঁতা হয়ে গেছে’।আয় আয় কাছে আয়।।
এরপরেরটুকু আমাদের আলোচ্য নয়। যেটা জানার দরকার ওই কাঁটাগাছের ভোঁতা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। ভাবতে পারলে কত সাহস জোগায়।অচ্ছে দিন আটকায় কে।সবকটা রিপুকে রিয়াল,ভার্চুয়াল (আকার,নিরাকার)সব ঢঙেই আস্বাদসুখে বিভোর হয়ে আছি।প্রকৃতিকে থোড়াই কেয়ার করা কৃতি মানুষের ভিড়ে গাছের পাতাগুলোও আতঙ্কিত। দুর পাগলি,নরক বলে কিছু হয়না। হলেও তখন তো আমি মৃত। কাঁটাগাছ ভোঁতা হয়ে গেছে,ভাবিস না।সিন্ডিকেট যুগ যুগ জিও।
সত্যিই কি ভোঁতা হয়েছে।হয়নি। জানা গেল এই গণতান্ত্রিক ভাইরাস-করোনা আসার পর। কি খেল দেখাচ্ছে, বাপ রে।রাজা, উজির, মন্ত্রী-শান্ত্রী,ঠাকুর,সঙ্গিনী সব একসাথে কোয়ারান্টিনে।ভাইরাসটার ছবি দেখে বোঝা যায় এ নিশ্চয় সেই কাঁটাগাছের ফল।
গোলাকার বলের গায়ে কাঁটা ভর্তি।নরকের শাস্তিটা এবার মরণের আগেই। শাস্তিটা ভাবুন – শারীরিক রোগ,সামাজিক অস্পৃশ্যতা,আর্থিক শুন্যতা।বিদ্যুৎ চলে যাওয়া টিভি স্ক্রিনের মতো ভবিষ্যত।পাতার খসখসনির মতো উড়ে বেড়ায় খবর, ‘ওই নীলবড়ির দোতলায় একজনের কোভিড ধরা পড়েছে,আর পানদোকানের গলিতে রতনের দাদু কাল কোভিডে মারা গেছে।কি অসহ্য পরিবেশ।
কাম নাই।সে কথকঠাকুরের কামই বলো বেকারের কর্মসংস্হান,কাম নাই।কাম না থাকলেও ধাম থাকবে। নতুন ফর্ম্যাটে কথকঠাকুরেরা আসবে।সুখের নতুন ফর্ম জায়গা করে নেবে।কথকঠাকুরদের ভাষা,নাটকীয়তা বদলাবে।বাদলাবে না নীচে নামার অভ্যেস। লকডাউন –এক সতর্কতা। ডাউন বা নীচে নামা বন্ধ করতেই হবে। কাঁটাগাছের ধার ভোঁতা হয়নি।
সকালে সুর্য্যের আলো তখনও ছায়া তৈরী করে উঠতে পারেনি, ভি আই পি রোডের সার্ভিস লেন ধরে হেঁটে যাওয়া মানুষটা মন প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে চায়। আজ প্রকৃতি কিচ্ছু নিতে দেবে না। মাস্ক-বন্দী মানুষ মৃত্যু আতঙ্কে।
কাশীপুর উদ্যানবাটীর দেওয়ালে এখনও জ্বল জ্বল করছে ‘আশীর্বাদ করি,তোমাদের চৈতন্য হোক।“