মোহনবাগান এবং ভারতীয় ফুটবলের শুরুর কথা – পর্ব ২

Photo: iStock

মোহনবাগান ক্লাবের নাম কেন মোহনবাগান, সেকথা আগের বারে বলেছি ৷ আমার ধারণা, শুধু আমার নয়, অনেকেরই ধারণা, প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক মুকুল দত্তের লেখাতেও পেয়েছি, মোহনবাগান অমনিবাস বইতে ( পৃষ্ঠা ১৪৪/১৪৫) মোহনবাগান ভিলার সামনের মাঠ বলেই ক্লাবের নামও দেওয়া হয়েছিল মোহনবাগান ৷

শুধু তাই নয়,  মোহনবাগান স্পোর্টিং ক্লাব ৷ যদিও একবছর বাদেই ক্লাবের নাম পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায় মোহনবাগান এথলেটিকস ক্লাব ৷ এটা কেন হ’ল, সে বিষয়েও একটি কাহিনী রয়েছে ৷  সেটা হল এরকম, মোহন বাগান স্পোর্টিং ক্লাবের একবছর পূর্তি উপলক্ষে বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করতে এলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরাজী ভাষার অধ্যাপক এফ জে রো ৷ (  F.J.Row) বিখ্যাত যে নেসফিল্ড গ্রামার, ইনিই তার প্রণেতা ৷ তখন পড়ানো হত রো য়্যান্ড ওয়েবের নেসফিল্ড গ্রামার ৷ মোহনবাগান ক্লাবের যারা সদস্য, প্রায় সকলেই পড়তেন প্রেসিডেন্সিতে ৷ তাঁরাই নিমন্ত্রণ করে এনেছিলেন রো সাহেবকে ৷ সভার শুরুতেই সাহেব জানতে চাইলেন, তোমাদের ক্লাবে কি য়্যাঙ্গলিং, রাইফেল শুটিং হয় ? না ৷ হয় না ৷ মাছ ধরা বা বন্দুকের গুলি ছোঁড়াও যে স্পোর্টস, তা কেউ ভাবতে পারেন নি ৷ তখন সাহেব বললেন, তোমরা ক্লাবের নামের সঙ্গে ” স্পোর্টিং ” কথাটি না লিখে, এথলেটিকস লিখতে পারো ৷ সেটাই ব্যকরণ সম্মত ৷ শিক্ষাবিদ এফ জে রো এর সুপারিশক্রমে মোহনবাগান স্পোর্টিং রূপান্তরিত হল মোহনবাগান এথলেটিকস ক্লাবে ৷ সেই ১৮৯০ সালেই ৷ 

এখন বলি ক্লাবের পতাকার রং, ক্লাবের প্রতীক চিহ্ন নিয়ে ৷ এই দুটি বিষয়েই নির্ভর করার মত তথ্য দিতে পারা বই এর খুবই অভাব ৷ মোহনবাগান স্পোর্টিং ক্লাব তৈরী হয় ১৫ই আগস্ট ১৮৮৯ সালে ৷ঐ সময় অবিভক্ত বাংলার নানা জেলায় ব্যায়াম, জিমন্যাসটিক,লাঠিখেলা, ছোরা খেলা ইত্যাদির সংঘ গড়ে উঠছিল ৷ এদের মধ্যে অনেক বিপ্লবীরাও ছিলেন ৷ হাওড়া জেলার শিবপুর অঞ্চলের বাজেশিবপুরে আজও একটি ক্লাব এখনও বেঁচে আছে ৷ নাম দি ফ্রেন্ডস ক্লাব ৷ স্থাপিত ১৮৮৯ সালের জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারী ৷ কিন্ত “মোহনবাগান “হল শুরু থেকেই অভিজাত মানুষদের ফুটবল ক্লাব ৷ কারা কারা প্রতিষ্ঠাতা জানেন ? শ্যামপুকুরের বসুরা, পশুপতি বসুদের বাড়ি, গিরীন বসু,রায়বাহাদুর চূণীলাল বসু, ডাক্তার  মনীন্দ্র নাথ বসু,  ফড়িয়াপুকুরের মিত্ররা যেমন  মহারাজা কীর্তিচন্দ্র মিত্র, মহারাজা রাজেন্দ্র ভূপ বাহাদূর অফ কোচবিহার, স্যার রাজেন মুখার্জী, শ্যামপুকুরের দূর্গাচরণ লাহা, বাগবাজারের মনিলাল সেন, ইত্যাদি ব্যক্তিরা ৷  এই ব্যক্তিরা ১৫/০৮/১৮৮৯ সকালে  ১৪নং বলরাম ঘোষ স্ট্রীটের বাড়িতে যখন সভা করছিলেন, তখন একটি বেশ বড় আকারের প্রজাপতি এসে বসেছিল ওই সভার মাঝখানে ৷ প্রজাপতিটির রং ছিল সবুজ মেরুণ ৷ এত সুন্দর দেখতে প্রজাপতি দেখা যায় না ৷ উপস্থিত সকলেই এক কথায় , ঐ সবুজ মেরুণই হবে মোহনবাগান ক্লাবের জার্সির রং, এই সিদ্ধান্তে স্থিত হয়ে যান ৷ আর যেটা জার্সির রং, সেটাই ক্লাবের পতাকার রং ৷কিন্ত পতাকার উপরে ক্লাবের প্রতীক চিহ্ন বা ক্রেস্ট কি হবে ? ঐ সময়ে কলকাতায় বেশী যানবাহন ছিল না ৷ বাসের তো প্রশ্নই নেই, ট্রাম সবে চালু,মানুষ এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতো নৌকা করে ৷ আর পাশেই তো গঙ্গা ৷ শ্যামবাজার থেকে গঙ্গা কতদূর ? এক কিলোমিটারও হবে না ৷ বাগবাজারে তো গঙ্গার ঘাটই আছে ৷ সুতরাং গঙ্গার ওপর সবুজ মেরুণ রং এর পালতোলা নৌকা তরতরিয়ে এগোচ্ছে, এইটাই হল মোহনবাগান ক্লাবের প্রতীক  চিহ্নের জন্মকাহিনী ৷ অনেকে রয়েল বেঙ্গল বাঘের প্রতীক চিহ্নের কথা বলেন বটে, কিন্ত আমরা দেখিনি সেই প্রতীক ৷ এর পরে আমরা জানবো, মোহনবাগানের মাঠের কথা ৷৷ 

Welcome ATK MOHUN BAGAN FC

–সমগ্র রচনাটি লিখেছেন শ্রী গৌতমরঞ্জন বসু ৷৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *