কী কয়েন কত্তা

দশ-এর ঝামেলা প্রায় চুকেবুকে গেছে। রাবণ ছাড়া দশ নিয়ে এত ঝক্কি আর কাউকে পোহাতে হয়েছে কিনা কে জানে। কোনও এক জাঁদরেল বক্তার কাছে শুনেছিলাম রাবণ কখনও স্যান্ডো গেঞ্জি পরতে পারে না। দশ মাথা গলে না।

দশের কয়েন নিয়ে সেকী হুলুস্থুলু কাণ্ড। বাসে-ট্রামে-মেট্রোতে। কেউ কাউকে ছেড়ে দিচ্ছে না। কয়েন দিলেই হয় কন্ডাক্টর খচে ব্যোম। না হলে যাত্রী। আর কেউ পায়ের ওপর স্পাইক জুতো পরে লাফালেও গলা এত উচ্চ-সা-তে ওঠে না। কয়েকদিন পর একটু পরিস্থিতি নরম হল যখন সবাই বিড়ালের স্নান করছে। অগত্যা নিতে হচ্ছে আর কি।  ষোল’শ না আঠের’শ-এর ফাইন। নানা জনের নানা মত। ফলে কয়েন বিভ্রাট শেষমেশ বিদায় নিলেন।

image001

কিন্তু তারপরও একটা গপ্প আছে। কয়েনমালিক এখনও কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা। সঙ্গে থাকলে মন খুচুরখুচুর করে। মনে হয় ভিখারিকে দিয়ে এই তালে একটু পুণ্য করে নি। বালি ব্রিজ, হাওড়া ব্রিজ বা হুগলী সেতু ভুঁড়ি ভেতরে রেখে ‘জ্যায় গ্যাংগা’ বলে কয়েন ছুঁড়ে জলে টুপুস। আওয়াজের চোটে গঙ্গা গোমুখে ফিরে যাচ্ছিল আর একটু হলে। সুলভে দশ টাকা দিয়ে অ্যাডভান্স বুকিং করে রাখুন। কালীমন্দিরে প্রণামী বাক্সে ফেলে ‘রেখো মা দাসেরে মনে’ বলুন। বাজারে চার আঁটি নিমপাতা কিনে ১৪ টাকাকে দর করে যেই দশ-এ আনা গেল, ওমনি ফুটফুটে দশের কয়েন। সঙ্গে থাকলে কেমন যেন একটা হীনমন্যতাবোধ নাহ? শত্রুকে মনে হয় ৭.৭১ গ্রাম ছুঁড়ে মারি, সামান্য ধার দিয়ে। কয়েনে ধার দিয়ে ছোট সাইজের ঢ্যাঁড়শ, লঙ্কা, বিনস দিব্যি কুচকুচ করে কেটে  ফেলা যাবে। কাউকে না পেলে সিগারেট বা ফুচকা বা লিট্টির দোকান আছে। চায়ের দোকানে দিলে এখনও একটা বিরক্তিকর মুখ করে দোকানিরা নিয়ে নিচ্ছেন। তাল খুঁজছেন কখন তা আবার গুঁজে দেবেন। ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গেলে মাসল বানিয়ে ফিরছেন এমনটাও হতে পারে। কারণ এই দিন কয় আগেও দশ-এর কয়েনে হাজার দুই টাকা দিচ্ছিল ক্যাশ কাউন্টার থেকে। সুতরাং জিমের খরচা বেঁচে গিয়ে দুইজনা মিলে সিনেমা-টিনেমা দেখতে যেতেই পারেন। একটু ছোট সাইজের জামা পরলে আরও ভালো। তবে ভুঁড়ির দিকে নজর না দিলে কেস খাবেন। পেশায় গোয়েন্দা বা পুলিশ বা চোরাকারবারি যাই হোন না কেন, গুলি খাওয়ার ভয় থাকলে বুকপকেটে একগোছা রাখতে পারেন। আপনি বাঁচলে কয়েনের নাম। ক্যারামের ঘুঁটি করতে গিয়ে ও পাড়ার প্যালা যদিও যথেচ্ছ মার খেয়েছে ক্লাবদস্যুদের হাতে। এমনটা না করাই ভালো। সবথেকে ভালো হল, মেনে নেওয়া। কয়েন ছিল, দিব্যি ছিল। মাঝে আরবিআই যা বলেছিল, কথা ফিরিয়ে নিয়েছে। দশের কয়েন দিব্যি চলছে। এইসব ভাবগম্ভীর কাণ্ডকারখানা না করে বরং দশের কয়েনেও বড়লোক ভাব আনুন মুখে। হাসিমুখে দিন, হাসিমুখে নিন। দশের খান চারেক কয়েন হাতে কোলে বা পিঠে ট্যাটু করিয়ে নিন। দিব্যি জমে যাবে!

 

— লিখেছেন সুপ্রতীম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *