লিখেছেন আকাশ ঠাকুর
নতুন দু’হাজারে গান্ধিজিকে দেখলে করুণা হচ্ছে। যেন গতকাল হোলি খেলেছিলেন এখনও মুখের রঙ ওঠেনি। এমনিতেই ছবির বাজারে পিঙ্ক এখন হিট। আচমকা দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ, এম্মা গান্ধির গালে লিপিস্টিকের চুম্মা? তাহলে কী ফাদার অফ নেশানের সন্তান কাউন্ট বাড়ল? নাহ! সে’গুড়ে বালি। কাউন্টিং মেশিন সব এখন ব্যাঙ্কে। ব্যাঙ্কে যা ভিড় তা মোটামুটি নামী থিমপুজোকে হার মানায়। কত লম্বা লাইন? ফিতে দিয়ে মাপার চেষ্টা না করাই ভালো। তবে হ্যাঁ, লাইনের শুরুতে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তাকে লাইনের শেষ লোকটি যদি ভুল করে ফোন করে বসেন রোমিং চার্জও কেটে নিতে পারে।
একগালে চড় খেলে আরেক গাল বাড়িয়ে দিতে হয়— এমনটাই বলেছিলেন গান্ধি। তাহলে কী নতুন নোটে তার অন্য গালের ছবি সেইজন্যই? চড় খেলো তার বংশধরেরা। গাল ঘোরানো ছবি কি তারই প্রতীকি? এমনিতেই স্যোসাল মিডিয়ায় “গান্ধিজি চেঞ্জড হিস প্রোফাইল পিকচার” বলে ভাইরাল হয়ে গেছে জোক। তার চেয়েও বড় জোক রাহুল গান্ধি এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়ে চারহাজার টাকা তুলেছেন। মাত্র চারহাজার তুললেন? তাহলে কী বাকিটা তোলার জন্য সুইস ব্যাঙ্কে লাইন দেবেন? না না। বিতর্ক নয়। স্বচ্ছ ভারতে বিতর্ক নয়।
কালো টাকা তো সাফ। তাও আবার নয়-এগারোয়। মার্কিনি নয়-এগারোর সাথে তফাত শুধু একটাই। সেবার একটা বিদেশি প্লেন আমেরিকায় ঢুকে পড়েছিল। আর এবার একটা ভারতীয় প্লেন বিদেশে উড়ে গেল। দেখেশুনে মনে হচ্ছে ভারত তার প্রথম এন আর আই প্রধানমন্ত্রী পেয়ে গেছে। বিদেশ ভ্রমণ করে করে বিদেশি আদবকায়দাও দারুণ রপ্ত করেছেন উনি। স্টেজে উঠলেই যেভাবে আজকাল কেঁদে ফেলছেন যেন সদ্য অস্কার পাওয়া কেট উইন্সলেট।
পিএমবাণী ইণ্ডিয়া অনুসারে আপনাকে লাইন রাখতে হবে আগামী পঞ্চাশ দিন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আগামী পঞ্চাশদিন আপনি করবেন কী? নতুন টাকা নিয়ে সেলফি উইথ গান্ধিজি খেলাটাও ক্লিশে হয়ে গেছে। সোস্যাল মিডিয়া ট্রল পুরনো হয়ে গেছে। এমনকী পুরনো হাজার পাঁচশোর নোট বাড়ির দেওয়াল, বিছানার তোষক ইত্যাদি ত্যাগ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে চলে গেছে। সামনের বছর থেকে মিউজিয়ামেও চলে যেতে পারে। তাহলে উপায় একটাই যা যা মেডিকাল টেস্ট করানোর আছে করিয়ে নিন। দরকার হলে শীতের ভোরে ঠ্যান্ডা জলে স্নান করে ফুলস্পিডে পাখা চালিয়ে বসে থাকুন। কিংবা গভীর রাতে চেতন ভগত পড়ার চেষ্টা করুন। কারণ, একমাত্র নিজেকে অসুস্থ করে তুলতে পারলেই আপনি জিতে নেবেন হাসপাতালে নোট ভাঙ্গানোর সুযোগ। ওখানে পুরনো নোট এখনও নিচ্ছে। এখন বুঝছেন তো সারদায় টাকা খেলে কেন হসপিটাল যেতে হয় বারবার?
তার মধ্যে লাগে বাঁশ, দেবে এনডিটিভি। দুহাজার কোটি টাকার দুটো বাণ্ডিল নাকি ভুল ছাপা হয়েছিল। ব্যাস রাতারাতি সব গায়েব। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সাবনিউজে- আম্বানী টাটাদের কাছে আগেই খবর ছিল। তাহলে কেসটা কী দাঁড়াচ্ছে সবই তো গুলিয়ে যাচ্ছে। সন্দীপ রায় বা অরিন্দম শীলের ফোন নম্বর থাকলে এখনি ডায়াল করুন। এই কেস ফেলুদা ব্যোমকেশ জয়েন্ট ভেঞ্চার না হলে অঙ্ক মিলবার নয়। আবার অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশকে ফোন করে বসবেন না যেন। উনি আবার কালো টাকা পেলে আগুন লাগিয়ে দিতে পারেন ক্লাইম্যাক্স সিন ভেবে। এমনিই বাজার ভালো না দাদা। যদিও আমাদের এনআরআই পিএম মার্কিনি জোকারের ক্রিস্টো নোলানীয় ঢঙে এখন বলতেই পারেন “It’s not about the money, it’s about sending a message”.
তবে শেষ করার আগে একটা কথা না বললেই নয়। দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে কষ্ট সহ্য করছেন ভালো কথা। কিন্তু আপনার দেশ কী করছে সেটাও জেনে রাখুন। পুরনো পাঁচশো হাজারের একটা বড় অংশ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকেদের কাছে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাটনা টু বিহার রেল দুর্ঘটনায় জখম যাত্রীদের হাতে রেল কোম্পানী ক্ষতিপূরণ হিসেবে তুলে দিয়েছে বাতিল নোটের বস্তা। ডিয়ার পিএম স্যার। দেখবেন আবার স্বচ্ছ ভারত করতে গিয়ে গোটা ডাস্টবিনটাই দেশের ওপর উলটে দিয়ে পরিষ্কার করতে যাবেন না যেন।