গল্পটা বলি, মন দিয়ে শুনুন। গল্পটা ৫৬ হাজার বছর আগের এক পৌরাণিক কাহিনী। লবনাসুরের (চলতি কথায় লোনাসুর) অত্যাচারে পৃথিবী তখন জর্জরিত। শুধু মানুষদের ওপর আত্যাচার করে আর সুখ পাচ্ছিলো না লোনাসুর। বোধহয় ভীমরতি ধরেছিল। সে একদিন দেবতাদের আক্রমন করে বসলো। পৌরাণিক গল্পে যা হয় – দেবতারা লোনাসুরের সাথে পেরে উঠেল না। তাঁরা যথারীতি বিষ্ণুর স্মরনাপন্ন হলেন। বিষ্ণু চতুরমতি। তিনি সুদর্শন এক যুবকের রূপ ধরেলেন – নাম নিলেন দৈত্যসূদন। চালটা ভালই – দৈত্যসূদনের রূপ দেখে লবনাসুরের বোন লবনী তাঁর প্রেমে পড়ে গেল। একদিন প্রেমের ফাঁকেই দৈত্যসূদনের লবনীর মুখ থেকে জেনে ফেললো লোনাসুরের গতিবিধি, লুকানো গুহার ঠিকঠিকানা। তারপর আর কি – দৈত্যসূদন গুহার পাথর সরিয়ে তাঁকে আক্রমন করল। যুদ্ধের শেষে পরাজিত ক্রুন্দনরত লোনাসুরকে সেই গুহাতেই চিরকালের মত বন্ধ করে দিলেন বিষ্ণু। লোনাসুরের কান্না কিন্তু থামল না, তাঁর চোখের জল জমে জমে গুহার চারপাশে এক হ্রদের সৃষ্টি হল। কাহিনীটি স্কন্দ পুরানের। আর হ্রদটার নাম হল লোনার হ্রদ। মহারাস্টের অজন্তা গুহার থেকে ঘণ্টা তিনেকের পথ।
নাসার বিজ্ঞানীরা এই গল্পটি শুনেছিলেন কিনা জানিনা। কিন্তু স্যাটেলাইটের ছবি দেখে তাঁদের কৌতূহল জাগে। হ্রদের পাথর নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তাঁরা এই পরিণতিতে পৌঁছান যে 56 হাজার বছর আগে এক উল্কা এসে পড়ে এই হ্রদের জন্মদেয়। সারা বিশ্বে উল্কা পাতের ফলে তৈরি এরকম গুনে চারটি হ্রদ আছে। এইটি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হোলো এই হ্রদের ধারের পাথরের খনিজ গঠন চাঁদের পথেরর সাথে একবারে মিলে যায়।
নাসা আর্থ অবসারভেটরি স্যাটেলাইট ইমেজ মে ২৫, ২০২০
সেইথেকে নাসার বিজ্ঞানীরা নজর রাখছিলেন এই হ্রদের ওপর স্যাটেলাইট দিয়ে। কয়েকসপ্তাহ আগে স্যাটেলাইটের ছবি দেখে তাঁরা অবাক হয়ে যান। সবুজ রঙের হ্রদটি হঠাৎ লাল হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে আরেকপ্রস্থ গবেষণা। হ্রদটির মাঝেখানের জল নোনতা, কিন্তু ধারের জল সোডা ওয়াটার। সবুজ রঙটা জলের সোডা, স্যালাইন, জীবাণু ও এক ধরনের শ্যাওলার মিলিত কারণে ছিল। বিজ্ঞানীদের অনুমান যে জলে স্যালাইন বা নুনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে।
নাসা আর্থ অবসারভেটরি স্যাটেলাইট ইমেজ জুন ১০, ২০২০
আমি বলি-কি, এই বছরে পৃথিবীর অবস্থা দেখে লোনাসুরের কান্না বেড়ে গেছে। হয়ত শুধু চোখের জলই নয় এখন পুরনো ক্ষত থেকে রক্তও ঝরছে। নইলে শুধুশুধু এরকম জল লাল হয়ে যায়?